**স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন এর সংজ্ঞা:**
স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন হলো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করে সিগন্যাল ট্রান্সমিট ও রিসিভ করার প্রক্রিয়া। এতে রেডিও তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে ডেটা, ভয়েস বা ভিডিও সিগন্যাল একটি উপগ্রহের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়।
---
**স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন এর প্রয়োজনীয়তা:**
১. **বিশাল কভারেজ:** স্যাটেলাইট একটি বিস্তৃত এলাকা (এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চল) কভার করতে পারে, যেখানে টেরিস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক (যেমন ফাইবার অপটিক বা টাওয়ার) স্থাপন করা কঠিন বা ব্যয়বহুল।
২. **ব্রডকাস্টিং:** টিভি, রেডিও এবং ইন্টারনেট সেবা গ্লোবালি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উপযোগী।
৩. **জরুরি যোগাযোগ:** প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় স্থলভিত্তিক নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হলে স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৪. **মোবাইল কমিউনিকেশন:** বিমান, জাহাজ বা দূরবর্তী স্থানে মোবাইল ডিভাইসের সাথে সংযোগ স্থাপন।
৫. **GPS ও নেভিগেশন:** অবস্থান-ভিত্তিক সেবা প্রদানে স্যাটেলাইট অপরিহার্য।
---
**স্যাটেলাইটের কার্যপ্রণালী (ব্লক ডায়াগ্রাম সহ):**
**ব্লক ডায়াগ্রামের বিবরণ:**
১. **আর্থ স্টেশন (প্রেরক):** ব্যবহারকারীর ডেটা (ভয়েস, ভিডিও) এনকোড করে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সিগন্যালে রূপান্তর করে।
২. **আপলিংক:** এই সিগন্যাল স্যাটেলাইটে প্রেরণ করা হয় (উদাহরণ: Ku ব্যান্ড-এ ১৪ GHz)।
৩. **স্যাটেলাইট:**
- **রিসিভিং অ্যান্টেনা:** আর্থ স্টেশন থেকে সিগন্যাল গ্রহণ করে।
- **ট্রান্সপন্ডার:** সিগন্যাল অ্যামপ্লিফাই করে এবং ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন করে (যেমন ১৪ GHz থেকে ১১ GHz)।
- **ট্রান্সমিটিং অ্যান্টেনা:** প্রক্রিয়াকৃত সিগন্যাল পৃথিবীতে ফেরত পাঠায়।
৪. **ডাউনলিংক:** স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল গ্রাহক আর্থ স্টেশন বা ডিভাইসে (যেমন ডিশ অ্যান্টেনা) পৌঁছায়।
৫. **আর্থ স্টেশন (গ্রাহক):** সিগন্যাল ডিকোড করে মূল ডেটা পুনরুদ্ধার করে।
---
**স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনের প্রকারভেদ:**
১. **জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (GEO):**
- উচ্চতা: ~৩৬,০০০ কিমি।
- ব্যবহার: টিভি ব্রডকাস্টিং, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ।
- সুবিধা: স্থির অ্যান্টেনা, গ্লোবাল কভারেজ (৩টি স্যাটেলাইট)।
২. **লো আর্থ অরবিট (LEO):**
- উচ্চতা: ৫০০–১,৫০০ কিমি।
- ব্যবহার: মোবাইল কমিউনিকেশন (ইরিডিয়াম নেটওয়ার্ক), ইন্টারনেট (স্টারলিংক)।
- সুবিধা: কম লেটেন্সি (~১০ ms)।
৩. **মিডিয়াম আর্থ অরবিট (MEO):**
- উচ্চতা: ১০,০০০–২০,০০০ কিমি।
- ব্যবহার: GPS নেটওয়ার্ক (গ্যালিলিও, GLONASS)।
- সুবিধা: LEO ও GEO-এর মধ্যম পর্যায়ের কভারেজ।
৪. **হাইলি এলিপ্টিক্যাল অরবিট (HEO):**
- বৈশিষ্ট্য: উপবৃত্তাকার কক্ষপথ।
- ব্যবহার: মেরু অঞ্চলে যোগাযোগ (মোলনিয়া স্যাটেলাইট)।
---
**সারাংশ:**
স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন আধুনিক যোগাযোগের মেরুদণ্ড, বিশেষত যেখানে স্থলভিত্তিক ব্যবস্থা অকার্যকর। ভিন্ন কক্ষপথের উপগ্রহগুলি বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার হয়—GEO টিভি ব্রডকাস্টিং, LEO মোবাইল সেবা, MEO নেভিগেশন, এবং HEO বিশেষ অঞ্চলের কভারেজ দেয়।
0 Comments